আজকের আলোচ্য বিষয় সমূহঃ
কয়েক ফোটা ঋতুস্রাবের পর বন্ধ হওয়া, হায়েযের রক্ত প্রবাহে ত্রুটি দেখা দেয়া, হায়েযের কারণে কুমারিত্ব বা সতীত্ব দূরীভূত না হওয়া, হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে শয়ন, হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখা, সহবাসের পর হায়েয শুরু হওয়া, হায়েয অবস্থায় সহবাস করার শাস্তি, হায়েয অবস্থায় লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যভাবে সঙ্গম, হায়েয বন্ধ হওয়ার পর সহবাস, হায়েয অবস্থায় সহবাস করার পর হায়েয বন্ধ হওয়া ও গোসল করা, সহবাস নিষিদ্ধ হবার সময়সমূহহায়েয বা মাসিক প্রতিটা মহিলার একটা স্বাভাবিক ঘটনা। মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা হয়ে থাকে। যা হযরত হাওয়া (আ.) থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
কিন্তু এই হায়েয বা মাসিক নিয়ে প্রায় সব মহিলার মনেই কিছু না কিছু প্রশ্ন আছেই। লজ্জার বিষয় তাই হয়তো অনেক মহিলাই মাসিক নিয়ে কারো সাথে খুলা-মেলা (মাসলা-মাসায়েল) আলোচনা করতে পারেন না।
তাই আমরা কোরআনের আলো ব্লগের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এখন থেকে মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনে জরুরি মাসায়েল সম্পর্কিত পোষ্ট করা হবে ইন-শা-আল্লাহ, আল্লাহু-তায়ালা। এইসব পোষ্টের মাধ্যমে বালিকা থেকে মহিলা প্রায় সবার মাসায়েল বা সমস্যা গুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। এই পোষ্ট গুলো “মহিলাদের জরুরি মাসায়েল” নামে ব্লগের ম্যানুবারে পেয়ে যাবেন।
আল্লাহু তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীন প্রচারের জন্য কবুল করুণ।
সম্পর্কিত পোষ্ট
নারীদের গোপন মাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ১
হায়েয সংক্রান্ত মাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ২
ইসলামে নারীর পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মহিলাদের যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েয
মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণ কেমন হবে
হায়েয সংক্রান্ত মাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ৩
কয়েক ফোটা ঋতুস্রাবের পর বন্ধ হওয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলার প্রথম ক'দিন কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনবরত ১০ দিন তা বন্ধ থাকার পর অধিক পরিমাণে ঋতুস্রাব হয়ে পাঁচদিন অব্যাহত থাকে। বর্ণিত অবস্থায় কোন কোন দিনগুলো হায়েয হিসেবে ধর্তব্য হবে?
উত্তরঃ বর্ণিত অবস্থায় প্রথম ক'দিনের কয়েক ফোঁটা রক্ত হায়েযের মধ্যে গণ্য হবে না। ফলে সেই ১০ দিন তাকে পবিত্র ধরা হবে এবং পবিত্র অবস্থার যাবতীয় বিধান তার উপর প্রযোজ্য হবে। আর এই ১০ দিন পর যে ৫ দিন বেশি পরিমাণে ঋতুস্রাব হয়েছে, সেই ৫ দিন হায়েযের দিন হিসেবে গণ্য হবে এবং এই দিনগুলোতে হায়েযের যাবতীয় বিধান তার উপর প্রযোজ্য হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়াঃ খ. ৮, পৃ. ২২৮)
হায়েযের রক্ত প্রবাহে ত্রুটি দেখা দেয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলার প্রতি মাসে ৫ দিন হায়েয হতো। গত কয়েক মাস থেকে তাতে ত্রুটি দেখা দেয়। প্রথমে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হয়ে চারদিন বন্ধ থাকে। পঞ্চমদিন আবারো সামান্য রক্ত প্রবাহিত হয়ে ৭/৮ দিন বন্ধ থাকে। এরপর পুনরায় চালু হয়ে রক্ত প্রবাহ লাগাতার ৫ দিন অব্যাহত থাকে। বর্ণিত অবস্থায় হায়েযের হিসাব কেমন এবং কয়দিন হবে?
উত্তরঃ বর্ণিত অবস্থায় শেষের যে ৫ দিন অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয়, সেই ৫ দিন হায়েয হিসেবে গণ্য হবে, আর বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা হিসেবে ধর্তব্য হবে।
(ফাতাওয়া দারুল উলুমঃ খ. ১, পৃ. ২৭৮)
হায়েযের কারণে কুমারিত্ব বা সতীত্ব দূরীভূত না হওয়া
প্রশ্নঃ কেউ কেউ বলে, হায়েয হলে মেয়েদের আর কুমারিত্ব থাকে না। তার কথাটি কতটুকু সঠিক?
উত্তরঃ ‘হায়েয হওয়ার পর মেয়েদের কুমারিত্ব (সতীত্ব) নষ্ট হয়' কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অমূলক। (কিফায়াতুল মুফতীঃ খ. ২, পৃ. ৩২৩-৩২৪)
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে শয়ন
প্রশ্নঃ হায়েয-নেফাস অবস্থায় স্ত্রীর সাথে শয়ন করা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, জায়েয আছে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়াঃ খ. ৮, পৃ. ২১৬) তবে হ্যাঁ, স্বামী যদি নিজেকে সংযত রাখতে না পারেন আর গুনায় লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেই ক'দিন তিনি দূরে থাকলে অন্তত উভয়ে গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। হায়েয-নেফাস হলেই যে স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে! এটি ইহুদী আর নাসারার নষ্ট সংস্কৃতি এবং অসামাজিক কাজ। বরং তাদের কষ্টের সময় সঙ্গী হওয়া ভালো।
আরো পড়ুনঃ
নামাজ অবস্থায় অযূ ভঙ্গ হলে করণীয়
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখা
প্রশ্নঃ হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখার অনুমতি আছে কি?
সহবাসের পর হায়েয শুরু হওয়া
প্রশ্নঃ সহবাসের দরুণ এক মহিলার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অপরদিকে গোসল করার আগেই তার হায়েয শুরু হলো। এ অবস্থায় সহবাসের দরুণ ফরয হওয়া গোসল তার জন্য করা জরুরি কিনা?
উত্তরঃ না, জরুরি নয়। (নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িলঃ পৃ. ৭৬) এ অবস্থায় তার গোসল করা আর না করা দুই সমান। সহবাসের ফরজ গোসল করলেও হায়েয আসার কারণে নাপাকই থাকবে মুদ্দতে হায়যে। সহবাসের পর শারীরিক অস্বস্তি দূর করার জন্য গোসল করা যায়, তবে পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নয়।
হায়েয অবস্থায় সহবাস করার শাস্তি
প্রশ্নঃ কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় সহবাস করে। এখন তার করণীয় কী?
উত্তরঃ হায়েয অবস্থায় জেনেশুনে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা আপনাকে হায়েয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা অপবিত্রতা। অতএব তোমরা হায়েযের সময় স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাক এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। (সূরা বাকারাঃ ২২২)
সুতরাং ঐ ব্যক্তির কর্তব্য হল, আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করা। আর এক্ষেত্রে হায়েযের শুরুর দিকে সহবাস হলে এক দীনার আর শেষ দিকে হলে অর্ধ দীনার সদকা করার কথা কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি উপরোক্ত নিয়মে সদকা করে দেওয়া উত্তম।
প্রকাশ থাকে যে, দীনার একটি স্বর্ণমুদ্রা। যা বর্তমান হিসেবে ৪.৩৭৪ গ্রাম সমপরিমাণ স্বর্ণ। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২০১; বাযলুল মাজহূদ ২/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৭; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৫৭; আব্দুররুল মুখতার ১/২৯৮)
সম্পর্কিত পোষ্ট
হায়েয অবস্থায় লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যভাবে সঙ্গম
প্রশ্নঃ স্বামী যদি সহবাসের তীব্র প্রয়োজনবোধ করে, কিন্তু স্ত্রী হায়েযা বা ঋতুবতী হয়। এমতাবস্থায় স্ত্রীর দুই নিতম্বের মাঝামাঝি জায়গায় ঘর্ষণ করে বীর্য বের করা জায়েয আছে কি?
সতর্কবাণীঃ “অতএব তোমরা হায়েযের সময় স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাক এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়।” (সূরা বাকারাঃ ২২২)
হায়েয বন্ধ হওয়ার পর সহবাস
প্রশ্নঃ হায়েয থেকে পাক হওয়ার পর গোসলের পূর্বে সহবাস করা জায়ে আছে কি?
উত্তরঃ যদি ১০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়, তাহলে গোসলের পূর্বে সহবাস করা জায়েয আছে। তবে গোসলের পর সহবাস করা মুস্তাহাব। আর যদি ১০ দিনের পূর্বে বন্ধ হয়, তাহলে সহবাস বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্তের একটি পাওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ হয়তো গোসল করতে হবে নতুবা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর এই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হতে হবে যে, তার যিম্মায় নামাযের কাযা ফরয হয়ে যায়।
অর্থাৎ যখন ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর নামাযের সময় শেষ হওয়ার পূর্বে এতটুকু সময় পাওয়া যায়, যার মধ্যে দ্রুত গোসল করে তাকবীরে তাহরীমা বলা যায়। সুতরাং কারো যদি আসরের এই পরিমাণ সময়ের পূর্বে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়, যার মধ্যে গোসল করে তাকবীরে তাহরীমা বলতে পারবে না, তাহলে তার জন্য গোসল না করে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে সহবাস করা জায়েয হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়াঃ খ. ২, পৃ. ৬৯)
হায়েয অবস্থায় সহবাস করার পর হায়েয বন্ধ হওয়া ও গোসল করা
প্রশ্নঃ একদা কোন মহিলার স্বামী সফর থেকে এসে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করে। উক্ত মহিলা তখন হায়েযা ছিল। অনেক নিষেধ করার পরও তাকে বিরত রাখতে পারেনি। এমন অবস্থায় হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর তার উপর কতবার গোসল করা জরুরি? এক মহিলা তাকে বলেছে, তাকে দু'বার গোসল করতে হবে। একবার হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য, আরেকবার সহবাসের জন্য। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান কোনটি?
উত্তরঃ প্রথম কথা হলো স্বামী কাজটি ভালো করেনি, যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। আর উক্ত মহিলার কথাটি সঠিক নয়। সহবাস এবং হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য দুইবার গোসল করা জরুরি নয়। বরং একবার-ই যথেষ্ট। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়াঃ খ. ৮, পৃ. ২৩০)
সহবাস নিষিদ্ধ হবার সময়সমূহ
প্রশ্নঃ কোন কোন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হতে পারে না?
উত্তরঃ নিম্ন বর্ণিত অবস্থায় সহবাস নিষেধ-
১. হায়েয অবস্থায়।
২. নেফাস অবস্থায়।
৩. স্ত্রী যদি স্বাস্থ্যগতভাবে এত দুর্বল হয় যে, তার পক্ষে সহবাসের কষ্ট সহ্য করা সম্ভব নয়, কিংবা দুর্বলতার কারণে ডাক্তার সহবাস করতে নিষেধ করেছেন।
৪. স্বামী যদি এমন কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, সহবাসের ফলে স্ত্রীর মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। যেমন- এইডস ইত্যাদি।
৫. স্বামী বা স্ত্রী কারোর রোযা অবস্থায়।
৬. হাজী হিসেবে ইহরাম পরিধান করে।
৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার পর্ব ১
ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব ও বিধান
ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
যৌবনকাল ইসলামে ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়
চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত #তাকবীরউলা
হস্তমৈথুন এবং এটা থেকে বাঁচার উপায়
দামি আতর কেনা কি অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে?
দুই মসজিদ কাছাকাছি, কোন মসজিদে নামাজ পড়বেন?
মোবাইল ফোনে কোরআন তেলাওয়াতের আদব