কাযা নামায পড়ার নিয়ম
১। যদি কোন ব্যক্তির কোন ফরয নামায ছুটে যায়, স্মরণে আসা মাত্রই কাযা নামায পড়া ওয়াজিব। বিনা ওজরে যদি কাযা পড়তে বিলম্ব করে, তবে গোনাহগার হবে।
সুতরাং যদি কারো কোন নামায কাযা হয়ে যায় এবং স্মরণ আসামাত্র তার কাযা আদায় না করে অন্য সময় আদায় করবে বলে রেখে দেয় এবং হঠাৎ মৃত্যু এসে পড়ে, তার দুই গোনাহ্ হবে। এক গোনাহ্ নামায না পড়ার, আর এক গোনাহ্ সময় পাওয়া সত্ত্বেও তার কাযা না পড়ার। ইচ্ছাপূর্বক নামায ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ্। এ গোনাহ্ মাফ পেতে হলে শুধু কাযা পড়লে হবে না বা শুধু তওবা করলেও চলবে না, তওবাও করতে হবে, কাযাও পড়তে হবে।
২। যদি কারো কয়েক
ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে থাকে তবে যথাশীঘ্র সমস্ত নামায কাযা পড়ে নেয়া উচিত। এক
এক ওয়াক্তে দুই তিন বা চার ওয়াক্তের কাযা পড়ে নিলেও ভালো হয়। যদি একান্ত কেউ
অপারগ হয় (যেমন বেশি অভাবী লোক হয় এবং ছেলেমেয়েদেরকে খেটে খাওয়াতে হয় বিধায়
সময় না পায়, তবে খাটুনির বাইরে যখনই একটু সময় পাবে, তখনই কাযা পড়ে নিবে)
অন্ততঃ এক এক ওয়াক্তের সাথে এক ওয়াক্তের কাযা পড়বে।
৩। কাযা নামায পড়ার জন্য
কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, যখনই একটু সময় পাওয়া যায়, তখনই অযু করে দুই চার ওয়াক্তের
কাযা পড়ে নেয়া যায়, তবে মাকরূহ ওয়াক্তে পড়বে না।
সম্পর্কিত পোষ্ট
জুমুয়ার
নামায পড়ার নিয়ত/Jumuwar namaz poṛar
niyot
নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ
নামাজ
বা সালাত আদায়ের নিয়ম-Namaj Adayer Niyom
৪ । যদি কারো মাত্র দুই
এক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে থাকে, এর পূর্বে কোন নামায কাযা হয়নি অথবা কাযা
হয়েছে, কিন্তু কাযা পড়ে না নেয়া পর্যন্ত তার ওয়াক্তিয়া নামায দুরস্ত হবে না।
কাযা না পড়ে যদি ওয়াক্তিয়া পড়ে, তবে তা আবার দোহরায়ে পড়তে হবে। অবশ্য যদি
কাযা নামাযের কথা স্মরণ না থাকা বশতঃ ওয়াক্তিয়া নামায পড়ে থাকে, তবে
ওয়াক্তিয়া নামায দুরস্ত হবে, দোহরায়ে পড়তে হবে না। কিন্তু স্মরণ হওয়া মাত্রই
কাযা পড়ে নিবে।
৫। যদি ওয়াক্ত এমন
সংকীর্ণ হয় যে, কাযা পড়ে ওয়াক্তিয়া পড়লে ওয়াক্তিয়াও কাযা হয়ে যাবে, তবে
ওয়াক্তিয়া আগে পড়ে নিবে, অতঃপর কাযা পড়বে।
৬-৭। যদি কারো দুই তিন
চার বা পাঁচ ওয়াক্তের নামায কাযা হয়, অর্থাৎ এক দিনের পরিমাণ কাযা হয়, তাহলে
তাকে ‘সাহেবে তারতীব' বলে। এক দিনের বেশি নামায কাযা হলে অর্থাৎ ছয় বা ততধিক
নামায কাযা হয়ে গেলে তখন আর তারতীব ঠিক থাকে না, এক সাথে হোক বা পৃথক পৃথক কাযা
নামায জমা হোক, ‘সাহেবে তারতীব' হলে তার যেমন কাযা এবং ওয়াক্তিয়ার মধ্যে তারতীব
রক্ষা করা ফরয, তেমনি কাযা নামাযগুলোর মধ্যে রক্ষা করা ফরয। কারো ফরয, যোহর, আসর,
মাগরিব এবং ইশা (বেতরসহ) কাযা হলে নামাযগুলো পড়ার পূর্বে পরদিনের ফজরের নামায
পড়লে তা শুদ্ধ হবে না এবং যে নামাযগুলো কাযা হয়েছে তাও পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ আগে
ফজর, তৎপর যোহর, অতঃপর আসর, মাগরিব, এরপর ইশা, তারপর বিতর পড়তে হবে। সাহেবে
তারতীব না হলে কাযা নামায রেখে দিয়েও ওয়াক্তিয়া পড়লে তা দুরস্ত হবে এবং যে
নামাযসমূহ কাযা হয়েছে তন্মধ্যে তারতীব রক্ষা করা ফরয হবে না।
আরও
পড়ুনঃ
সালাতুস তাসবীহ
দোয়া করার নিয়ম
৫ টি কথায় সকল
চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়
তওবা কবুল হওয়ার শর্ত/Taoba Kobul Hoyar Sorto
৮। যদি কারো ছয়
ওয়াক্তের উপর পূর্বের সময়ের কাযা থাকে। অতঃপর নিয়মিত নামাযী হয় এবং দীর্ঘদিন
পরে হঠাৎ এক ওয়াক্তে কাযা হয়ে যায়, তবে সেও ছাহেবে তারতীব থাকবে না। এই কাযা
রেখে ওয়াক্তিয়া নামায পড়লে ওয়াক্তিয়া নামায দুরস্ত হয়ে যাবে।
৯। কারো জিম্মায় ছয়
কিংবা বহু নামায ছিল, সেজন্য সে ছাহেবে তারতীব ছিল না, তবে সে এখন থেকে আবার
ছাহেবে তারতীব হবে। সুতরাং আবার যদি পাঁচ সংখ্যক ফরয নামায কাযা হয়, তবে আবার
তারতীব রক্ষা করা ফরয হবে এবং পুনঃ যদি ছয় বা ততধিক সংখ্যক কাযা একত্রিত হয়ে
যায়, তাহলে আবার তারতীব মাফ হয়ে যাবে, (কাযা নামায থাকতে ওয়াক্তিয়া নামায
পড়তে পারবে।) কিন্তু পূর্বেই বলা হয়েছে ইচ্ছাকৃত কাযা না পড়ে তারতীব মাফ হয়ে
যাবে এ আশায় কাযার সংখ্যা বাড়াতে থাকলে গোনাহ্ হবে।
১০। বহু সংখ্যক নামাযের
অল্প অল্প করে কাযা পড়তে পড়তে মাত্র চার পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ঠ থাকলেও তারতীব
ওয়াজিব হবে না। এই চার পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে যা ইচ্ছা আগে পড়তে পারবে এবং
চার-পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্তিয়া নামায পড়তে পারবে।
১১। যদি কারো বেতরে নামায
কাযা হয়ে যায় এবং অন্য কোন নামায যিম্মায় না থাকে, তবে বেতর না পড়ে ফজরের
নামায পড়া যায়েয হবে না। স্মরণ থাকা এবং সময় থাকা সত্ত্বেও যদি বেতর না পড়ে
ফজর পড়ে, তবে বেতর কাযা পড়ে তৎপর ফজর পুনরায় পড়তে হবে।
১২। যদি কোনো (লোক
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে প্রথম বয়সে) বে নামাযী (থাকে এবং কিছুদিন পর সৌভাগ্যবশত)
তওবা করে নামায পড়া শুরু করে, তবে (বালেগ হওয়ার পর থেকে) তার যত নামায ছুটে
গিয়েছে সকল নামাযের কাযা পড়া ওয়াজিব হবে, তওবার দ্বারা নামায মাফ হয় না। অবশ্য
নামায না পড়ায় যে নাফরমানীর গোনাহ্ হয়েছিল তা মাফ হয়ে যাবে। এখন যদি বিগত সব
নামাযের কাযা না পড়ে, তবে গোনাহ্ হবে।
১৩। কেউ শুধু ইশার নামায
পড়ে বেতর না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ল, শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে বেতর পড়ল,
তাতে জানতে পারল যে, ভুলে ইশার নামায বে-অযু অবস্থায় পড়েছিল, তার শুধু এশার
নামায কাযা পড়তে হবে, বেতর কাযা পড়তে হবে না।
১৪। শুধু ফরয এবং বেতরের
নামায কাযা পড়ার হুকুম আছে, তা ছাড়া সুন্নাত বা নফলের কাযা পড়ার হুকুম নেই।
অবশ্য (যদি সুন্নাত বা নফল নামায শুরু করার পর নিয়ত ভঙ্গ হয়, তাহলে তার কাযা
পড়তে হবে) ফজরের নামায যদি ছুটে যায় এবং দুপুরের পূর্বে কাযা পড়ে, তবে
সুন্নাতসহ কাযা পড়তে হবে, কিন্তু এক্ষেত্রেও দুপুরের পর কাযা পড়লে শুধু ফরয দুই
রাকায়াতের কাযা পড়তে হবে, সুন্নাতের কাযা পড়তে হবে না।
১৫। নামাযের ওয়াক্ত
সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় (কিংবা জামাআত ছুটে যাওয়ার ভয়ে) যদি কেউ ফজরের সুন্নাত
ছেড়ে শুধু ফরয পড়ে নেয় তবে সূর্য উদিত হয়ে এক নেযা উপরে উঠার পর থেকে দুপুরের
পূর্বেই সুন্নাতের কাযা পড়ে নিবে।
১৬। যদি কারো কিছু সংখ্যক
নামায ছুটে যায় এবং তার কাযা পড়ার পূর্বে মৃত্যু এসে পড়ে, তবে মৃত্যুর পূর্বেই
ঐ সব নামাযের জন্য ফিদিয়া দেয়ার অসিয়ত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব। যদি অসিয়ত
না করে, তাহলে গোনাহগার হবে। (ফিদিয়ার পরিমাণ বেতরসহ প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের
পরিবর্তে দুই সের গম বা তার মূল্য, কিংবা একজন গরিব-দুঃখী বা মিসকীনকে দুই বেলা
পেট ভরে খাওয়ানো)।
১৭। যদি কোনো কারণবশত এক
দল বা গোটা কাফেলার নামায কাযা হয়ে যায়, তবে যারা ওয়াক্তিয়া নামায যেমন
জামায়াতে পড়তো, তদ্রপ কাযা নামাযও জামায়াতে পড়বে। সিরিয়া নামাযের কাযার মধ্যে
চুপে চুপে কিরায়াত পড়বে এবং জেহরিয়া কাযার মধ্যে উচ্চ:স্বরে কিরায়াত পড়বে।
১৮। কোন নাবালেগ ছেলে
ইশার নামায পড়ে ঘুমিয়েছিল সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিধানের কাপড়ে দাগ দেখতে পেল
(অর্থাৎ রাত্রি থাকতে বালেগ হয়েছে এরূপ আলামত পাওয়া গেলে) তার ইশা এবং বেতরের
নামায কাযা পড়তে হবে
কাযা নামাযের নিয়ত
نويت أن أقضى لله تعالى أربع ركعات صلوة العصر القابتة فرض الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন
আকদ্বিয়া লিল্লাহি তাআ'লা আরবাআ রাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়িতাতি, ফারদুল্লাহি
তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃ আমি আল্লাহ
তায়ালার জন্য চার রাকাত আসরের কাযা নামায আদায় করতে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম,
আল্লাহু আকবার ।
কাযা নামাযের নিয়ত আন
উছাল্লিয়া না বলে তার স্থলে আন আক্দ্বিয়া এবং ওয়াক্তের নামের পর আল ফয়েতাতি
অর্থাৎ, বাদ গেছে বলতে হবে। যথা- আসরের কাযা নামাযের নিয়ত উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো পড়তে পারেনঃ
হজ্জের ফরয, ওয়াজিব সুন্নাতসমূহ
হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত-Hajjer Gurutto o Fajilat
কোন দেশ
থেকে কত মানুষ হজে যেতে পারবে
নামাজ ও যাকাত এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
কোরবানীর
ইতিহাস ও ওয়াজিব হওয়ার শর্ত/Qurbani
কুরবানির
পশু জবাইয়ের দোয়া ও পদ্ধতি
পশু যবেহ করার সময় বিশেষ লক্ষণীয় ও কর্তব্য
যে সময়
দোয়া কবুল হয়-Je Somoy Dua Korle Kobol Hoy
ঈদের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম-Eider namajer niyot o niyom
নফল রোজার মাসআলা/Nafal Rojar Masala
সূরা ফাতিহার
শানে নুযূল/ Sura Fatihar Sane Nuzul
সূরা ফাতিহার
বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত/Sura Fatihar Fojilot
কবিরা গুনাহসমূহ/Kobira Gunahasomuh
পাঁচ কালেমা আরবি ও বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ/5 Kalema
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের নিয়ম/Ḍhila-kulukh beboharer niyom