Breaking

April 16, 2022

হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত-Hajjer Gurutto o Fajilat

হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত 


     যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, সব রকম দিধা-দন্দ্ব ছেড়ে দিয়ে, সব রকম মনের ওয়াছওয়াছা ছেড়ে দিয়ে, সব রকম ভ্রান্ত ধারণা ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে হজ্জের পাকা-পোক্ত নিয়ত করে নিতে হবে। ওয়াছওয়াছা এজন্য বললাম যে, হজ্জের ব্যাপারে অনেকের মনে অনেক রকম ওয়াহওয়াছা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এব্যাপারে মানুষের সবচেয়ে বড় ওয়াছওয়াছা এই হয় যে, সামনে করব। সামনে করব এটা হল সবচেয়ে বড় ওয়াছওয়াছা। আমাদের চোখের সামনে বহু লোক সামনে করব, সামনে করব- এই করতে করতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছেন, হজ্জ করা তাদের নছীব হচ্ছে না। অথচ হজ্জ শরীয়তের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফরয। এটা ইসলামের পাঁচ বুনিয়াদের একটা। তাই হজ্জ ফরয হওয়ার পর এই গুরুত্বপূর্ণ ফরয হজ্জ আদায় করতে বিলম্ব করলে যত বিলম্ব করতে থাকব, ততই আমার গোনাহ্ হতে থাকবে। আর খোদা না খাস্তা এই বিলম্ব করার কারণে যদি আমি হজ্জ না করে মারা যাই, আর মারা যাব না এই গ্যারান্টি কে দিয়েছে? যদি হচ্ছ না করে মারা যাই, তাহলে আমার ব্যাপারে রাসূল (সঃ) কত শক্ত কথা বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ

سن سات ولم يحج وعليه الحج فليمت ان شاء يهوديا وان شاء نصرانيا ۔ (مشكوة عن الدارمي) 

     অর্থাৎ, হজ্জ ফরয হওয়ার পরেও বিনা ওজরে হজ্জ না করে যে মারা যায়, সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক তাতে আমার কোন পরওয়া নেই। রাসূল (সাঃ)-এর একজন উম্মত ইয়াহুদী হয়ে মারা যাবে কিংবা খৃষ্টান হয়ে মারা যাবে, আর রাসূল (সাঃ)-এর মনে তার ব্যাপারে দরদ আসবে না এটাতো হতে পারে না। তাহলে হজ্জ না করে মারা যাওয়া লোকদের ব্যাপারে কত শক্ত মনোভাব নিয়ে রাসূল (সাঃ) এ কথাটা বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায় হজ্জ ফরয হওয়ার পর হজ্জ না করা কত বড় মারাত্মক গোনাহের কাজ। আর যদি রাসূল (সাঃ)-এর কথা অনুযায়ী হজ্জ ফরয হওয়ার পরে হজ্জ না করে মরে যাওয়ার কারণে সত্যিই ইয়াহুদী বা নাসারাদের তালিকায় তার নাম উঠে যায়, তাহলে তো আর উপায় থাকবে না। যাহোক যে কথা বলছিলাম হজ্জ না করার পেছনে অনেকের এই ওয়াছওয়াছা কাজ করে যে, আগামীতে করব।

     অনেকের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে যে, হজ্জ করতে গেলে এত বিরাট অংকের টাকা খরচ হয়ে যাবে! কিছু কিছু লোক তো এমন আছে, যারা এটাকেই হজ্জের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করায় যে, হচ্ছের পেছনে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়ে যায়, যা আমাদের মত গরীব দেশের অর্থনীতি সামাল দিতে পারে না। কুরবানীর সময়ও এসব লোকেরা এই জাতীয় কথা বলতে থাকে যে, এত বিপুল পরিমাণ অর্থ কুরবানীর পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে! আবার এই একদিনে এত সংখ্যক প্রাণী জবাই হচ্ছে, যা সারা বৎসর জবাই হলে সারা বৎসরই মানুষের পুষ্টি যোগান দিতে পারত। হজ্জ এবং কুরবানীর প্রশ্ন আসলে অর্থনীতির জন্য তাদের এত মায়াকান্না হয়, অথচ খেলা-ধুলা, নাচ-গান ইত্যাদি নন প্রভাকটিভ খাতে এর চেয়ে বেশী অর্থ ব্যয় হয়, কিন্তু সেজন্য তাদেরকে কাঁদতে দেখা যায় না। আসলে ইসলামের বিরোধিতা করার জন্যই এই সব যুক্তি দাঁড় করানো হয়। কেউ কেউ নাউজুবিল্লাহ এরকমও বলে যে, হজ্জতো একটা মেলা নানা দেশ বিদেশের নারী পুরুষের একটা জমজমাট মেলা। এটা হল হজ্জের প্রতি মানুষকে বিতশ্রদ্ধ করে তোলার একটা শয়তানী বক্তব্য। এ ধরনের বক্তব্য দিলে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্জকে অবমাননা করা হয়। এ ধরনের বক্তব্য কুফরীর পর্যায়ে চলে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন।

     হজ্জের ব্যাপারে আমরা অনেকে আরও অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে রয়েছি। অনেকের ধারণা ছেলে-মেয়ে বিবাহ না দিয়ে হজ্জে যাওয়া যায় না। তারা বলে ছেলে-মেয়ে উপযুক্ত হয়ে গেছে ওদেরকে বিবাহ না দিয়ে কিভাবে হজ্জে যাই? এভাবে অনেকে হজ্জে যাওয়াকে পিছিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দেয়া এক কর্তব্য, হজ্জ আরেক কর্তব্য। এক কর্তব্যের অজুহাতে আরেক কর্তব্যকে পিছিয়ে দেয়া যাবে না। ছেলে মেলের বিবাহ আগে হজ্জ পরে এমন কোন কথা নেই। হজ্জ ফরয হলে হজ্জ করে নিব। ছেলে মেয়ের বিবাহের যখন ব্যবস্থা হবে তখন তাদেরকে বিবাহ দিব। ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য হতে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। ছেলে-মেয়ে বিবাহের উপযুক্ত হয়ে গেলে তাদেরকে বিবাহ না দিয়ে আমরা নামায পড়ছি, রোযা রাখছি, চাকুরী করছি, ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। তাদেরকে বিবাহ না দিয়ে এগুলো যখন করতে পারছি, তখন হজ্জ কেন করতে পারব না ? ছেলে-মেয়ের বিবাহের উপর হজ্জকে ঝুলিয়ে রাখার কোন বৈধতা নেই শরীয়তে।

     কেউ কেউ আছেন মনে করেন যে, একটা জমি কিনতে হবে, জমি না কিনে হজ্জ করি কিভাবে, বাড়ি করা দরকার বাড়ি না করে হজ্জ করি কিভাবে। এভাবে জমি কিনতে বাড়ি করতে টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যায়, তারপর হজ্জ আর করা হয় না একবার যদি হজ্জ ফরয হয়ে যায়, এরপর কোন কারণে তার কাছে টাকা-পয়সা নাও থাকে, অর্থ শুন্য হয়ে যায়, তাহলেও কিন্তু ঐ ফরযটা তার জিম্মায় থেকেই যায়। ঐ ফরয আদায় করতে না পারলে পাপ নিয়েই তাকে কবরে যেতে হবে। এই অজুহাত দিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না যে, আমার টাকা-পয়সা ফুরিয়ে গিয়েছিল, পরে আর হজ্জ করার মত টাকা-পয়সা হাতে আসেনি, তাই আমার কোন দোষ নেই। হজ্জ ফরয হয়ে গেলে জমি কেনা আগে নয়, হজ্জ করা আগে। হজ্জ ফরয হয়ে গেলে বাড়ি করা আগে নয় হজ্জ করা আগে। জমি কেনা হোক বা না হোক, ঘর করা হোক বা না হোক, বাড়ি করা হোক বা না হোক, হজ্জ ফরয হয়ে গেলে হজ্জ আদায় করেই নিতে হবে। জমি না কেনা হলে, বাড়ি না করা হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না, কিন্তু ফরয হজ্জ আদায় না করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং আটকে যেতে হবে।

     অনেক ভাই এই ভুল ধারণার শিকার যে, আমার মা বাবা হজ্জ করেননি আমি কিভাবে হজ্জ করব। এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা হজ্জ করছেন না। মনে করুন মা বাপ যদি মালদার না হন, তাদের উপর, যদি যাকাত ফরয না হয়, কিংবা যাকাত ফরয হওয়া সত্ত্বেও তারা যাকাত না দেন, তাহলে কি আমার উপর যাকাত ফরয হলেও আমি যাকাত না দিয়ে থাকব ? মাতা-পিতার মাল নেই একারণে তাদের উপরে যাকাত হয় না। কিন্তু আমার মাল থাকলে আমার উপর যাকাত ফরয হবে। এখানে মাতা-পিতার উপরে যাকাত ফরয হল না আমার উপর যাকাত ফরয হল কি করে ? তদ্রূপ আমার মাল থাকলে আমার উপর হজ্জ ফরয হবে, মাতা-পিতার মাল না থাকলে মাতা-পিতার উপরে হজ্জ ফরয হবে না। অতএব তারা হজ্জ করেনি বলে আমি হজ্জ করতে পারব না এটা বোকামীর যুক্তি। এক জনের ইবাদতকে আরেক জনের ইবাদতের সাথে এরকম ঝুলিয়ে রাখা যাবে না যে, অমুকে না করলে আমি করব না। অমুকে নামায পড়ে না বলে কি আমিও নামায না পড়ে থাকব? আমার ফরয আমাকেই আদায় করতে হবে। এ সমস্ত ভুল ধারণার কারণে হজ্জ না করলে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

     অনেকের এরকম ওয়াছওয়াছা হয় যে, হজ্জের জন্য এতগুলো টাকা খরচ করে ফেলব, এটা দিয়ে আরও কিছু দিন একটা ব্যবসা-বাণিজ্য করি, তারপর লাভ হবে, সেই লাভের টাকা দিয়ে হজ্জ করব। দেখা গেল টাকার মায়ায় তিনি হজ্জকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে তো টাকা কমে যাওয়ার মায়ায় কোন দিনই হজ্জ করতে যাচ্ছেন না। এসব লোকদেরকে মনে রাখতে হবে হজ্জ ওমরাহ করলে টাকা-পয়সা কমে না বরং বাড়ে। হজ্জ ওমরা করলে অভাব দেখা দেয় না বরং এর বরকতে অভাব দূর হয়। হাদীছে এসেছে। নবী করীম (সাঃ)

تابعوا بين الحج والعمرة فإنهما ينفيان الفقر والذنوب - (ترمدی ، نسائی و ابن ماجة)

    অর্থাৎ তোমরা লাগাতার হজ্ব ওমরাহ করতে থাক, একের পর এক হচ্ছ ওমরাহ করতে থাক। এই হজ্জ ওমরাহ তোমাদের পাপও মোচন করবে, অভাবও মোচন করবে। এ হাদীছ থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল হজ্জ ওমরাহ করলে অর্থ কমবে না বরং বাড়বে, অভাব আসবে না বরং অভাব মোচন হবে। দুনিয়াতে এরকম বহু আল্লাহর বান্দা আছেন যারা প্রতি বছর হজ্জ করেন, ওমরাহ করেন। আলহামদুলিল্লাহ প্রতি বছর তাদের অর্থের ব্যবস্থা হয়ে যায়। তাদের অভাব বাড়ে না বরং কমে, তাদের টাকা-পয়সা কমে না বরং বাড়ে। হাদীছের কথাতো মিথ্যা নয়। আমার আকীদা-বিশ্বাসে যদি দূর্বলতা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু রাসূল (সাঃ)-এর কথায় বিশ্বাস করে আমল করা শুরু করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ পাক হজ্জ ওমরাহ আদায়কারী ব্যক্তির সম্পদে বরকত দান করবেন। সম্পদে বরকত হওয়ার কথা যদি নাও থাকত, তবুও হজ্জের যে ফায়দার কথা বলা হয়েছে তার জন্য লক্ষ কেন কোটি টাকা ব্যয় করতেও দ্বিধা আসার কথা নয়। হাদীছে বলা হয়েছেঃ

من حج الله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته الله ـ (متفق عليه)

     অর্থাৎ যখন কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে গোনাহ মুক্ত হজ্জ করে সেই হজ্জ থেকে ফিরে আসে, সে যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের মত নিস্পাপ ও নিঃকলুষ হয়ে ফিরে আসে।

   এ হাদীছের দিকে নজর রাখলে যাদেরকে আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন তারা ফরয হজ্জ আদায় করে থাকলেও গোনাহ মুক্ত হয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি বছরই তাদের হজ্জে যাওয়ার কথা। প্রতি বছরই হজ্জ করে আসবে আর গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আসবে। গোনাহ তো যিন্দেগীতে হতেই থাকে। তাই প্রতি বছরই হজ্জ করে আসবে আর গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আসবে। যে সম্পদ ব্যয় হবে আল্লাহ পাক বরকত দান করবেন। তাই যাদের উপর হচ্ছ ফরয হয়েছে, সব রকম ওয়াছওয়াছা, সব রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সব রকম ভ্রান্ত ধারণা ছেড়ে দিয়ে তারা হজ্জের নিয়ত করে নেই।

     হজ্জের নিয়ত করতে গেলে আরও অনেক রকম মনের বাঁধা আসতে পারে। মনে হতে পারে বর্তমানে আমার নানান রকম অসুবিধা, ফ্যামিলির এই অসুবিধা সেই অসুবিধা, আমার বা অমুকের এই রোগ সেই রোগ, বা আমার ঘর দেখার কেউ নেই, বাচ্চা-কাচ্চা দেখার কেউ নেই। এরকম নানান অসুবিধার সাইড সামনে আসতে পারে। কিন্তু আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি আমাদের কারও যদি বিদেশে যাওয়ার বিরাট একটা সুযোগ এসে যায়, তাহলে কি এই জাতীয় ওযর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে? তখন কি এই চিন্তা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে যে ছেলে মেয়েকে দেখবে কে, ঘর সামলাবে কে পরিবারকে দেখবে কে? তখনতো সব কিছু ম্যানেজ করে নিতে পারব। শুধু দ্বীনের কাজে যেতে হলে তখন আর ম্যানেজ করার উপায় থাকে না। তখন সব রকম অসহায় সামনে এসে হাজির হয়।

     আসলে এগুলো হল মনের দূর্বলতা। মানুষ যখন কোন কাজের পাকা-পোক্ত নিয়ত করে ফেলে, তখন তার সব ব্যবস্থাও সে করতে পারে। এটা আমাকে করতেই হবে এই মনোভাব যখন এসে যাবে, তখন কি কি অসুবিধা আছে, কিভাবে সেগুলো দূর করা যায় তার চিন্তা-ফিকিরও ভিতরে এসে যাবে। মানুষ যখন কোন কাজের এরকম মনোভাবে চলে আসে যে, আমাকে করতেই হবে, তখন সব ব্যবস্থাও তার হয়েই যায়। আল্লাহ পাকই করে দেন। আল্লাহর কাজের পাকা নিয়ত করলে অবশ্যই আল্লাহ সব কিছু ব্যবস্থা করে দিবেন। 

     যাহোক যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, তারা সব ওয়াছওয়াছা বাদ দিয়ে হজ্জের নিয়ত করে নেই। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন যাদের প্রতি আমাদের কিছু করণীয় আছে, তারা যদি হজ্জ ফরয হওয়ার পর হজ্জ না করে দুনিয়া থেকে চলে যেয়ে থাকেন তাদের বদলী হজ্জের ব্যবস্থা করাই। বিশেষ ভাবে মাতা-পিতা যারা আমাদের জন্য সম্পদ রেখে গেছেন, তারা যদি হজ্জ ফরয হওয়ার পর হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করে থাকেন, তাহলে তাদের বদলী হজ্জ করানোর ব্যবস্থা করি। যদি তারা ওছিয়ত করে যেয়ে থাকেন, আর তারা সম্পদও রেখে গিয়ে থাকেন, তাহলেতো বদলী হজ্জ করানো ওয়ারিছের উপর ওয়াজিব। ওছিয়ত করে গিয়ে থাকলে যারা ওয়ারিছ তাদের উপরে এটা করানো ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি ওছিয়ত নাও করে থাকেন, তাহলেও তাদের চিন্তা করে দেখা দরকার যে, হজ্জ করা ফরয, এই ফরয আদায় না করার কারণে তাদের কবরে আযাব হতে পারে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে আমি সন্তান হয়ে কিভাবে এটা সহ্য করতে পারি? আমার সম্পদ আছে, আমি সম্পদ নিয়ে আরামে থাকব, আর তিনি কবরে আযাব ভোগ করতে থাকবেন তা কী করে আমি সহ্য করব? এরকম হলে সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় মাতা-পিতার বদলী হজ্জ করানোর ব্যবস্থা করা। যদি ওছিয়ত নাও করে থাকেন, তবুও সামর্থ্য থাকলে সন্তান হিসেবে নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় মাতা-পিতার বদলী হজ্জ্বের ব্যবস্থা করা। আশা করা যায় বদলী হজ্জ করানো হলে তাদের ক্ষমার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। মাতা-পিতা আমাদের জন্য কিছু না কিছু রেখেই গিয়েছেন, তাই তাদের ব্যাপারে গাফেল হওয়া ঠিক নয়। কবি বলেনঃ

تو تو نگرشی از مال ما این رمان غافل شدی از حال ما

     অর্থাৎ মাতা পিতা কবরে বসে সন্তানকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, তুমি আমার রেখে আসা সব কিছু দিয়েই স্বচ্ছল হয়েছ, অথচ আজ তুমি আমার কথা ভুলে গেছ।

     হজ্জ বয়স থাকতেই করা দরকার। শরীরে শক্তি সামর্থ থাকতেই করা দরকার। দেখা যায় আমাদের বাংলাদেশ, পাক, ভারত এই উপমহাদেশের মানুষরাই যখন দূর্বল হয়ে যায়, যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, তখন হজ্জ করতে যায়। কারণ সারা জীবন তো হজ্জ করেননি, মনে করেছেন বয়স হোক তারপর হজ্জ করব, হজ্জ থেকে ফিরে এসে আর দুনিয়ার কোন কাজ করব না, শুধু আল্লাহ বিল্লাহ করতে থাকব। এর অর্থ হল হজ্জ করব এমন বয়সে যখন কমর বাকা হয়ে যাবে। যখন দুনিয়ার কোন কিছু করার ক্ষমতা আর থাকবে না, তখন হজ্জ করে এসে একেবারে ফেরেশতা হয়ে যাব। এখন হজ্জ করে আসলে হজ্জের মর্যাদা রক্ষা করতে পারব না। হজ্জ করার পরও অনেক গোনাহের কাজ হয়ে যাবে। তাই বয়স হলেই হজ্জ করব। অর্থাৎ, ভাবখানা এমন যে, বৃদ্ধ হওয়ার পর যখন আর গোনাহ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখন হজ্জ করব। এভাবে একেবারে বৃদ্ধ হওয়ার পর তারা হজ্জ করতে যান। অন্যান্য দেশের মানুষ দেখা যায় হজ্জ ফরয হয়েছে, বয়স কম, তবুও তারা হজ্জ আদায় করে নিচ্ছে। আমাদের দেশের লোকেরা কি মনে করে যে, হজ্জ করার পর আর দুনিয়ার কাজ কর্ম করা হয় না? হজ্জ করার পর আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় না? আমি নামায পড়ার পর সাধারণ জীবন যাপন করতে পারি, আমি রোযা রাখার পর সাধারণ জীবন যাপন করতে পারি আমি যাকাত দেয়ার পর সাধারণ জীবন যাপন করতে পারি, তাহলে হজ্জ করার পর কেন সাধারণ জীবন যাপন করতে পারব না ? হজ্জ করার পর আর দুনিয়ার কোন কাজ করতে পারব না এই ধারণাটা কে দিল? এই সমস্ত ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়ে আমি হজ্জ না করে শরীরিক ভাবে যখন দূর্বলতার পর্যায়ে চলে আসি, তখন হজ্জ করতে যাই। শরীরিক ভাবে দূর্বল হয়ে গেলে হজ্জের কাজ গুলো ঠিকমত আদায় করা যায় না। তখন আক্ষেপ হয় যে, হায়রে বয়স থাকতে কেন হজ্জে আসলাম না। তাই সব রকম ওয়াছওয়াছা ঝেড়ে ফেলে এখনই হজ্জের নিয়ত করে নেয়া চাই।

     হজ্জের নিয়ত হতে হবে সম্পূর্ণ খালেস। কোন রকম মার্কেটিংয়ের নিয়ত, দেশ ঘোরার নিয়ত, বেড়ানোর নিয়ত এসমস্ত নিয়ত রাখা যাবে না। নিয়ত হবে একমাত্র আল্লাহকে রাজী খুশী করা। হজ্জ হতে হবে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেনঃ

 ويله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا -(সূরা আলু ইমরান : ৯৭)

     অর্থাৎ মানুষের হজ্জ করা দায়িত্ব আল্লাহর-ই উদ্দেশ্যে। যাদের সামর্থ্য আছে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছার তাদের উপর হজ্জ ফরয। এ আয়াতে কাদের উপর হজ্জ ফরয তা বোঝানো হয়েছে। সাথে সাথে হজ্জের নিয়ত সহীহ হওয়ার গুরুত্বও বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন, সব রকম ভুল ধ্যান-ধারণা থেক মুক্ত করুন, সব কিছু সহীহ ভাবে আমল করার তাওফীক নছীব করুন। আমীন। আমাদের সকলের যেন হজ্জ নছীব হয় এ জন্য দুআ করবঃ

اللهم وفقنا زيارة الحرمين -

     অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমাদেরকে মক্কা মদীনা যিয়ারতের তাওফীক নছীব করুন। আমীন।

واخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين

বয়ান ও খুতবা-১ (৩৫৫-৩৫৯)

আরো পড়তে পারেনঃ

রোজার গুরুত্ব

রোজা ভঙ্গের কারণসমুহ

রোজার মাকরুহসমূহ

রোজার কাফ্‌ফারা-র মাসায়েল

রোজার কাযার মাসায়েল

নফল রোজার মাসআলা/Nafal Rojar Masala

এতেকাফ-Etekaf-ইতেকাফ

এতেকাফ এর মাসাআলা/Etekaf er Masala/এতেকাফের শর্তসমূহ

যেসব কারণে এতেকাফ ফাসেদ তথা নষ্ট হয়ে যায় এবং কাযা করতে হয়

শবে কদর, এ'তেকাফ ও ফিতরা মাসআলা

শাওয়ালের ছয় রোজা

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য-EdulFitorer Tatporjo

সদকায়ে ফিতর/ফিতরা এর মাসায়েল/sadkaye fittor/fitara er masayel

নামাজ ও যাকাত এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

কুরবানীর ইতিহাস, তত্ত্ব, ফাযায়েল ও মাসায়েল

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়

তওবার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব

ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াত

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ

Popular Posts