Breaking

April 23, 2022

ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত-Ebadot Kobul Howar Short

ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব

 (ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ২য় পর্ব চাইলে পড়ে নিতে পারেন)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

সুপ্রিয় কুরআনের আলোর পথের যাত্রীরা আশা করি আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানিতে আপনারা সবাই ভালো আছেন।

জ্বীন এবং ইনসানকে অর্থাৎ, মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর ইবাদত করা। ইবাদত বলতে শুধু নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এরকম বড় বড় কয়েকটা বিষয় নয়, বরং জীবনের সব কিছুই আল্লাহর হুকুম এবং নবীর তরীকা অনুযায়ী করা। একজন পূর্ণ ইবাদত কারী ব্যক্তি সে, যে তার জীবনের সব কিছু কুরআন-হাদীছ অনুযায়ী গড়ে তোলে। যে তার কোন কিছু নিজের খেয়াল-খুশী মত করে না। সে মনচাহী যিন্দেগী চালায় না। তার জীবনের খুটি-নাটি বিষয় থেকে শুরু করে সর্ববৃহৎ বিষয় পর্যন্ত সব কিছু আল্লাহর হুকুম এবং রাসূল (সাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী চালায় ।


     ইখলাস অর্থ কি? ইখলাসের গুরুত্ব, অন্তরের আমল


    
আল্লাহ তাআলা যে ইবাদতের জন্য আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সেই ইবাদত আমার ইচ্ছামত করলে হবে না বরং আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য বা কবূল হওয়ার জন্য অনেকগুলি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় শর্ত হল ইখলাস। ইখলাস অর্থ একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশী করার জন্যই ইবাদত করা। এর সাথে যদি নিজের খাহেশাত, নিজের খেয়াল খুশী, নিজের মনের চাহিদাকে যুক্ত করা হয়, তাহলে সেটা ইখলাছ পরিপন্থি হয়ে যাবে। সেটা খাটি ইবাদত হবে না। ইবাদতের সাথে ইখলাছের সম্পর্ক হল দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক যেমন। রূহ্ যদি না থাকে, তাহলে এই দেহের কোন মূল্য থাকে না। ঠিক অনুরূপ ইখলাছ যদি না থাকে, তাহলে ইবাদতেরও কোন মূল্য থাকে না। ইখলাছ না থাকলে বরং রিয়া থাকলে যত বড় বড় ইবাদতই হোক, আল্লাহর কাছে তার কোন মূল্য নেই।
     কেয়ামতের দিন কিছু বড় বড় ইবাদতকারীকে ডাকা হবে, যেমন আল্লাহর রাস্তায় যারা জীবন দিয়ে দিয়েছে, এরকম কিছু লোককে ডাকা হবে। ডেকে বলা হবে, বান্দা! তুমি আমার জন্য কি করেছিলে? সে বলবেঃ আমি তোমার জন্য আমার জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ না, তুমি আমার জন্য দাওনি, তুমিতো জীবন দিয়েছ এজন্য যে, মানুষ তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে। তুমি তো যুদ্ধ করেছ এজন্য যে, মানুষ তোমাকে বড় যোদ্ধা বলবে। তুমি যে উদ্দেশ্যে এটা করেছিলে, দুনিয়াতে তা পেয়ে গেছ- মানুষ তোমাকে বাহাদুর বলেছে। কাজেই আজ আমার কাছে তোমার কিছুই পাওয়ার নেই, যাও জাহান্নামে চলে যাও। কতিপয় বড় বড় ইবাদত কারীকে ডাকা হবে। ডেকে জিজ্ঞাসা করা হবে বান্দা! আমার জন্য কি করেছ ? তারা বলবেঃ এত এত ইবাদত করেছি - সারারাত তোমার জন্য জাগরণ করে ইবাদত করেছি, সারাদিন রোযা রেখেছি ইত্যাদি। আল্লাহ পাক বলবেনঃ তুমিতো আমার জন্য করনি, তুমিতো এজন্য করেছ যে, মানুষ তোমাকে বড় বুযুর্গ বলবে, বড় ইবাদত কারী বলবে। তুমি যে উদ্দেশ্যে এগুলো করেছিলে, দুনিয়াতে সেটা পেয়ে গেছ তোমাকে মানুষ বুযুর্গ বলেছে, বড় ইবাদত কারী বলে প্রশংসা করেছে, যা পাওয়ার দুনিয়াতে তুমি পেয়ে গেছ। এখন আমার কাছে কিছুই পাওয়ার নেই। যাও জাহান্নামে চলে যাও। কিছু বড় বড় দানশীলদেরকে ডাকা হবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে বান্দা! আমার জন্য কি করেছ ? বলবে হে আল্লাহ! তোমার জন্য আমার এত এত টাকা-পয়সা দান করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমিতো আমার জন্য করনি, তুমিতো এজন্য করেছ যে, মানুষ তোমাকে বড় দানশীল বলবে। তুমি যে উদ্দেশ্যে এগুলো করেছিলে, দুনিয়াতে সেটা পেয়ে গেছ- তোমাকে মানুষ দানশীল বলে প্রশংসা করেছে। যা পাওয়ার দুনিয়াতে তুমি পেয়ে গেছ। এখন আমার কাছে কিছুই পাওয়ার নেই। যাও জাহান্নামে চলে যাও। এভাবে যাদের আমলে ইলাস নেই তারা সব ধরা পড়ে যাবে। তাদের ইবাদত কোনই উপকারে আসবে না।


রিয়া বা শিরক মানে কি? শিরক থেকে বাচার উপায়-সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক


    
একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশী করার নিয়ত ছাড়া অন্য কোন নিয়তে যারা যা করবে, আল্লাহকে পাক তা কবূল করবেন না। কারণ, সেটা ইখ্লাসের পরিপন্থি। যদি মানুষকে দেখানোর নিয়তে কিছু করা হয় অর্থাৎ, মানুষের কাছে সুনাম সুখ্যাতি অর্জনের নিয়তে বা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার নিয়তে কিছু করা হয়, সেটাকে বলে “রিয়া”। এই রিয়া হল ইখলাসের পরিপন্থী। এই রিয়া দ্বারা ইবাদতের ছওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। ইবাদতের কোন মূল্য থাকে না। কারণ, ইবাদতের সাথে ইখলাসের সম্পর্ক হল দেহের সাথে রূহের সম্পর্কের মত। রূহ না থাকলে যেমন দেহের কোন মূল্য নেই, তদ্রূপ ইখলাস না থাকলে ইবাদতেরও মূল্য নেই। কাজেই কোনভাবেই যেন মনের মধ্যে মানুষকে দেখানোর নিয়ত, মানুষের কাছে প্রশংসা অর্জন করার নিয়ত, মানুষের কাছে সুনাম-সুখ্যাতি ছড়ানোর নিয়ত ঢুকতে না পারে। এগুলোই মানুষের ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়।
    
     আমরা অনেকে দান ছদকা করি- কেউ মাদ্রাসা বানাই, মসজিদ বানাই, কেউ বন্যা দূর্গতদের সাহায্য করি বা বিভিন্ন ভাবে সমাজ সেবা করি ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে কিছু কিছু কাজ জাহেরী ভাবে ইখলাসের পরিপন্থী হয়ে যায়। যেমন কেউ মসজিদ, মাদ্রাসা বা কোন প্রতিষ্ঠান বানিয়ে বললেন এখানে আমার নামে একটা নেম প্লেট লাগানো হোক। উদ্দেশ্য হল যাতে মানুষ বোঝে যে, অমুকের দানে এটা হয়েছে। যখন বন্যা আসে, তখন বিভিন্ন দল ও সংগঠন বন্যা দূর্গত এলাকায় সাহায্য পাঠায়। সাহায্য পাঠানোর আগে দল বা সংগঠনের ব্যানার পাঠিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য তো এই যে, মানুষে জানুক কারা সাহায্য দিচ্ছে। অনেকে তো ফটোগ্রাফার সাথে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য পেপারে উঠুক, মানুষ জানুক। এগুলো জাহেরী ভাবে ইখলাসের পরিপন্থী। এগুলো মানুষের ইলাসকে ধ্বংস করে দেয়। তবে হ্যাঁ যদি ভাল নিয়তে এরকম করা হয়, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। যেমন কেউ নিয়ত করল যে, নেম প্লেট লাগানো থাকলে তা দেখে মানুষের আমার নাম স্মরণ হবে এবং তারা আমার জন্য দুআ করবে।

     এভাবে রিয়ার চেতনা নিয়ে দান খয়রাত করলে দুনিয়া আখেরাত উভয়ই বরবাদ। দুনিয়াতে আমার কষ্টে উপার্জিত টাকা-পয়সা গেল, আর আখেরাতের ছওয়াবও গেল। দুনিয়াতে একটু সুনাম প্রশংসা যা পেলাম, এটা কোন পাওয়া নয়। আখেরাতে যখন এটা কোন কাজে আসবে না, আসল সময়ে যখন এটা কোন কাজে আসবে না, তখন দুনিয়ার এই সামান্য পাওয়ায় কি লাভ হবে? রিয়া তাই বড়ই ক্ষতিকর।

রিয়াকে বলা হয় শিরকে আগর বা ছোট শির্ক। কারণ ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। এখন যখন আমি লোকেরা দেখবে জানবে এই উদ্দেশ্যে করলাম, তার অর্থ হল আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করলাম। এটাইতো শিরক। আল্লাহর সত্ত্বার সাথেও কেউ শরীক নেই, আল্লাহর গুণাবলীর সাথেও কেউ শরীক নেই, আল্লাহর ইবাদতের সাথেও কোন শরীক থাকতে পারবে না। এটাকেই বলা হয় ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদ বা একত্ববাদ। একত্বের বিষয়টা আল্লাহর সত্ত্বার ক্ষেত্রে যেমন থাকতে হবে, আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রেও থাকতে হবে, আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রেও থাকতে হবে। আল্লাহ পাক কোন প্রকার শির্ককে পছন্দ করেন না। তাই রিয়া থাকলে সেই ইবাদতকে তিনি কবুল করেন না।

 

রিয়া বা শিরক দূর করার উপায়-শিরক থেকে বাঁচার দোয়া

 

রিয়া একটা মনের রোগ। এটা একটা চিন্তার রোগ। কাজেই চিন্তা দিয়েই এ রোগকে দূর করতে হবে। রিয়া দূর করার উপায় হলঃ যখন আমি কোন ইবাদত করতে যাব, তখন চিন্তা করে দেখব আমার নিয়ত ঠিক আছে কি-না । আমি চিন্তা করে দেখব আমি কি উদ্দেশ্যে করছি। যদি মনের ভিতর কোন রকমে মানুষের কাছে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করা বা জানানো শোনানোর বা প্রশংসা অর্জন করার বা মানুষের কাছে ভাল হওয়ার নিয়ত আছে টের পাই, তাহলে সেটা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। একথা চিন্তা করতে হবে যে, মানুষের কাছে আমি যতই প্রশংসা অর্জন করি, মানুষ আমাকে যতই ভাল বলুক, কিন্তু পরকালে আসল বিপদের সময় এরা আমার কেউ কাজে আসবে না। দুনিয়াতে দেখা যায় কত বন্ধু-বান্ধব, কত আপন জন, কিন্তু বিপদের সময় অনেককেই পাওয়া যায় না। এতো দুনিয়ার অবস্থা। আর কেয়ামতের ময়দানে যখন প্রত্যেকের এই অবস্থা হবে যে, প্রত্যেকে বলতে থাকবে ইয়া নাফসী ইয়া নাফসী। অর্থাৎ, হায় আমার কি উপায় হবে, হায় আমার কি উপায় হবে। তখন কেউ কারোর কথা চিন্তা করার সুযোগ পাবেনা। তাই যাদের চিন্তা করে আমি আমার ইবাদত নষ্ট করব, ওরা আমার বিপদের সময় কোনই উপকারে আসবে না। দুনিয়াতে লক্ষ্য মানুষ আমাকে ভাল বলুক, কিন্তু আল্লাহর কাছে যদি আমি ভাল সাব্যস্ত না হই, তাহলে এই লক্ষ মানুষের ভাল বলা আমার কোন কাজে আসবে না।

কুরআন শরীফে সূরা বাকারার ৪৮ নম্বর আয়াতে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে "সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারও কোন উপকারে আসবে না।"

অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ


(সূরা আনআম: ১৬৪) -
ولا تزر وازرة وزر أخرى -

     অর্থাৎ, কেউ কারও পাপের বোঝা বহন করবে না। প্রত্যেকের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে। কাজেই যাদের চিন্তা করে আমি আমার ইবাদত নষ্ট করছি, এরা আমার আসল বিপদের সময় কোন উপকারে আসবে না। কাজেই তাদের চিন্তা করলে আমার কি লাভ? বরং এক আল্লাহর চিন্তা করি, যিনি আমাকে রক্ষা করবেন। এভাবে চিন্তা করলে মানুষের মন থেকে রিয়ার চিন্তা দূর হয়ে যায়, ইখলাস এসে যায়।

ইবাদত করার সময় আল্লাহকে রাজী-খুশী করা ছাড়া অন্য কোন নিয়ত থাকবে না। অনেক সময় অনেক ইবাদতের দ্বারা দুনিয়াবী কিছু ফায়দাও হয়। যেমন উযু করলে শরীর ঠান্ডা হয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন হয়। নামায পড়লে উঠা-বসা হয়, তাতে হার্টের উপকার হয়, শারীরিক ব্যায়াম হয় ইত্যাদি। ইবাদত করার সময় এসব দুনিয়াবী ফায়দা নিয়তে রাখা ঠিক নয়। এসব ফায়দার কথা নিয়তে না রাখলেও সেসব ফায়দা হয়ে যাবে। অনেকে মানুষকে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য এগুলো খুব ফলাও করে বয়ান করেন। এমন ভাবে বয়ান করেন যেন এই সব দুনিয়াবী ফায়দার জন্যই এই ইবাদতগুলির বিধান এসেছে। এভাবে বয়ান করা ঠিক নয়। ওলামায়ে কেরাম সাধারণতঃ এভাবে বয়ান করেন না। কারণ তাতে মানুষের ইখলাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন মানুষের মধ্যে নামায পড়ার সময় হয়ত এই নিয়ত এসে যাবে যে, ঠিক আছে আরও দুই রাকআত নফল পড়ে নেই, তাহলে আজকের মর্নিং ওয়ার্কের কাজটা সেরে যাবে। এতে ইবাদতের ছওয়াব নষ্ট হয়ে গেল। শুধু ওঠা-বসা করার নামতো ইবাদত নয়, ফিজিক্যাল ওয়ার্কের নাম নামায নয়। যদি ফিজিক্যাল ওয়ার্কের উদ্দেশ্যে ইবাদত আসত, তাহলে ব্যায়ামাগারগুলো সব চেয়ে বড় ইবাদতখানা বলে গণ্য হত। কারণ ওখানেই শরীরিক কসরৎ সব চেয়ে বেশী হয়। শারীরিক কসরৎ করার নাম ইবাদত নয়। নামাযের মধ্যে আমরা উঠা-বসা রুকু-সিজদা যা কিছু করি, এগুলির আসল রহস্য কি তা আল্লাহ তাআলাই জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে নামায পড়তে বলেছেন তাই নামায পড়ি। রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে এভাবে নামায শিক্ষা দিয়েছেন তাই এভাবে নামায পড়ি। আমরা নিজেদেরকে আল্লাহ আল্লাহর রাসূলের হুকুমের সামনে সপে দিয়েছি। তাঁরা যেরকম বলেছেন সেরকম করছি কোন যুক্তি রহস্য কিছুই বুঝি না। আল্লাহ আমার মাওলা, আমি তার গোলাম। আমার কাজ গোলামী করে যাওয়া। মুনিবের হুকুমের যুক্তি খোঁজা গোলামের কাজ নয়। নামাযের এমন কি যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে? একটু দাঁড়ানো, ওঠা-বসা। এটার এত গুরুত্ব কেন হবে? রোযা কেন এত বড় ইবাদত হতে যাবে? সারাদিন না খেয়ে থাকার এত ফজীলত কেন হবে? হিন্দুরাও তো মাতা-পিতা মারা গেলে উপোস করে থাকে, তাদেরটা তো রোযা বলে গণ্য হচ্ছে না? ওরা কেন ছওয়াব পাচ্ছে না? আসল কথা হল আমরা আল্লাহর হুকুম হিসেবে যা করছি, তাই ইবাদত বলে গণ্য হচ্ছে। যদি কেউ এগুলো আল্লাহর হুকুম হিসেবে না করে অন্য কোন হিসেবে করে, তাহলে তা ইবাদত বলে গণ্য হচ্ছে না। এজন্য ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র হুকুম মানার নিয়ত তথা আল্লাহ্‌কে রাজী-খুশী করার নিয়ত ছাড়া অন্য কোন নিয়ত থাকতে পারবে না। আল্লাহকে রাজী-খুশী করা ছাড়া অন্য কোন নিয়ত ঢুকলে হয়ত সেটা হবে কিন্তু ইবাদত হবে না, তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। নিয়ত হিসেবেই প্রত্যেকটা আমলকে বিচার করা হবে। নিয়ত অনুযায়ী আমলের বিচার হবে। হাদীছে পরিষ্কার বলা হয়েছেঃ

إنما الأعمال بالنيات ، وإنما لإمرئ ما نوىمتفق عليه

অর্থাৎ, সব আমল পরিগণিত হবে নিয়তের ভিত্তিতে। যা নিয়ত করবে, তাই পাবে। রাসূল (সাঃ) এ হাদীছের কথাগুলো বলেছিলেন যখন মুসলমানগণ মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাচ্ছিলেন তখন তারা মক্কার মাতৃভূমি, জায়গা-জমি, আপনজন সব কিছু ছেড়ে মদীনায় চলে যাচ্ছিলেন। একমাত্র আল্লাহর জন্য সব কিছু ছেড়ে যাওয়া হচ্ছিল। এমন একটা দেশে তারা যাচ্ছিলেন, যেখানে আপনজন কেউ নেই, যেখানে নিজেদের জায়গা জমি নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। এটা ছিল একটা অনেক বড় উঁচু দরজার দ্বীনী কাজ। তখন নবী (সাঃ) বলেছিলেনঃ এই হিজরতের মত এত বড় একটা আমলও যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হয়, তাহলে তাতেও কোন ছওয়াব পাওয়া যাবে না। তিনি বলেছিলেনঃ


فمن كانت هجرته إلى دنيا يصيبها ، أو إلى إمرأة يتزوجها ، فهجرته إلى ما هاجر اليه ـ (المصدر السابق)

অর্থাৎ, আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের উদ্দেশ্যে যার হিযরত হবে, তার হিজরত সঠিক হিজরত বলে গণ্য হবে। আর যদি কেউ দুনিয়া কামাই করার জন্য হিজরত করে যে, ওখানে গেলে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হবে, কারণ বহু দেশের মানুষ ওখানে হিজরত করে আসছে, কাজেই ওখানে ব্যবসা ভাল হবে। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ তাহলে তার দুনিয়া হবে কিন্তু হিজরত হবে না, হিজরতের ছওয়াব সে পাবে না। আর যদি কেউ এরকম মনে করে যে, আমি এক মহিলাকে ভালবাসতাম সে মক্কা থেকে মদীনায় চলে গেছে, অতএব আমি এখন মদীনায় গেলে তাকে বিবাহ করতে পারব। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ এভাবে যদি কোন মহিলার উদ্দেশ্যে কেউ হিজরত করে, তাহলে মহিলাকে হয়ত পাবে কিন্তু তার হিজরত সহীহ হিজরত বলে গণ্য হবে না। হিজরতের ছওয়াব সে পাবে না। এ হাদীছে ইবাদতের মূল শর্ত ইখলাস সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সব ধরনের ইবাদতে ইলাস থাকতে হবে অর্থাৎ, সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য হতে হবে, অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। নতুবা সেই ইবাদত সহীহ ইবাদত বলে গণ্য হবে না। সেই ইবাদতের ছওয়াব পাওয়া যাবে না। এই ইখলাস হল ইবাদতের সবচেয়ে বড় শর্ত।

বয়ান ও খুতবা-১ (৪৭১-৪৭৫)

আরো পড়তে পারেনঃ

রোজার গুরুত্ব

রোজা ভঙ্গের কারণসমুহ

রোজার মাকরুহসমূহ

রোজার কাফ্‌ফারা-র মাসায়েল

রোজার কাযার মাসায়েল

নফল রোজার মাসআলা/Nafal Rojar Masala

এতেকাফ-Etekaf-ইতেকাফ

এতেকাফ এর মাসাআলা/Etekaf er Masala/এতেকাফের শর্তসমূহ

যেসব কারণে এতেকাফ ফাসেদ তথা নষ্ট হয়ে যায় এবং কাযা করতে হয়

শবে কদর, এ'তেকাফ ও ফিতরা মাসআলা

শাওয়ালের ছয় রোজা

হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত-Hajjer Gurutto o Fajilat

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য-EdulFitorer Tatporjo

সদকায়ে ফিতর/ফিতরা এর মাসায়েল/sadkaye fittor/fitara er masayel

নামাজ ও যাকাত এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

কুরবানীর ইতিহাস, তত্ত্ব, ফাযায়েল ও মাসায়েল

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়

তওবার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াত

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ

Popular Posts