প্রথম পর্বে আলোচনা করা হয়েছিলো খৃষ্টান বা ইহুদি ধর্মে পর্দার বিধান সম্পর্কে, আপনারা যারা পোষ্টটি পড়েননি (বিভিন্ন ধর্মে পর্দার বিদান পর্ব ১) লিংক দিওয়া হলো দেখে নিতে পারেন।
মানবশিশু স্বাধীন সত্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কাজেই জন্মগতভাবেই মানুষ স্বাধীন। পুত্র ও কন্যা একই উৎস হতে সৃষ্টি। সৃষ্টিগতভাবে কন্যা ও পুত্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগত কারণে একে অপরের ওপর কোন প্রাধান্য রাখে না। মৌলিকতার দিক থেকেও উভয়ের মধ্যে কোন একজনের শ্রেষ্টত্ব নেই। বরং একে অপরের পরিপূরক। লৈঙ্গিক ভিন্নতার কারণে নারী এ পুরুষ যখন একে অন্যের উপর অনধিকার চর্চা, বৈষম্য ও প্রাধান্য বিস্তার করতে চায় তখনি অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
কন্যা বা নারীর মর্যাদা এ অধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আজকের সভ্যতাগর্বী সমাজেও নানা আলোচনা এ মতামত দেখা যায়। নারী স্বাধীনতা ও নারীবাদিতা আজকের একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ব্যাপারটিকে নিয়ে এমন কিছু ভাবা ও করা হচ্ছে- যার ফলে নারী স্বাধীনতা বা অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেয়ে নারীকে মারাত্মক ব্লাকহোলের মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে, যেখান থেকে উত্তরণের বা পরিত্রাণের ক্ষীণ সম্ভাবনাও তিরোহিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আজকের বিশ্ববিবেক যা ভাবছে নারী বা কন্যা শিশু নিয়ে ইসলাম তা সপ্ত শতকেই সমাধান দিয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ তা ভুলে গেছে বা বিভ্রান্তির কারণে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গোল ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে-
কুরআন জানিয়ে দিয়েছে- পর্দা নারীকে রক্ষা করে এবং তা তার সতীত্ব রক্ষায় সহায়ক হয় । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- চরিত্রের নিষ্কলুষতার প্রয়োজনীয়তা কী? কুরআন নিজেই এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলো- তারা যেন তাদের জিলবাবের (জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে।) কিছু অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৫৯]
সম্পর্কিত পোষ্ট
নারীদের গোপন মাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ১
ইসলামে নারীর পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মহিলাদের যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েয
ইসলামের সাথে অন্যান্য ধর্মের এ এক মৌলিক পার্থক্য। চরিত্রের নিষ্কলুষতা নারীকে অনাকাংখিত পরিস্থিতির মুখোমুখী হওয়া থেকে রক্ষা করে। ইসলামে পর্দার বিধান প্রনয়ণের হিকমত তথা কারণ হচ্ছে নারীর সুরক্ষা।
পবিত্র কুরআন নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার দিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। যে নারীদের সম্মানের হানি ঘটাতে আসবে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” [সুরা নূর, আয়াতঃ 8]
আমরা পবিত্র কুরআনের এ শাস্তি ও বাইবেলের শাস্তির মাঝে তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজন অনুভব করছি। বাইবেলে এসেছে- “কোনো পুরুষকে যখন বিবাহের এখনও প্রস্তাব আসেনি এমন কোনো অবিবাহিত নারীর সাথে অশ্লীলতায় লিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন উক্ত পুরুষ, নারীর পিতাকে ৫০ টি রৌপ্য মুদ্রা প্রদান করবে এবং তার চরিত্র হননের ফলস্বরূপ তাকে বিবাহ করবে; কখনও তাকে তালাক দিতে পারবে না।” [
Deut. 22:28-30]
আরো
পড়ুনঃ
নামাজ অবস্থায় অযূ ভঙ্গ হলে করণীয়
মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণ
কেমন হবে
একটি প্রশ্নের জবাব দিন তো! বলুন- এখানে শাস্তিটা কে পেলো? পুরুষকে যে জরিমানাস্বরূপ নারীর পিতাকে ৫০টি স্বর্ণমুদ্রা দেবে, নাকি উক্ত নারীকে যাকে উক্ত পুরুষের সাথে বিবাহ ও আজীবন ঘর-সংসারে বাধ্য করা হবে? কোন বিধান নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত? কুরআনের কঠিন বিধান না বাইবেলের লঘু শাস্তি? পশ্চিমাদের কেউ কেউ নারীদের রক্ষায় তার চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অবদান নিয়ে রীতিমত ঠাট্টা বিদ্রূপ করে থাকে। তাদের দাবি হলো নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বাধিক ভূমিকা রাখে শিক্ষা, শিষ্টাচার ও সভ্যতা। ভালো কথা। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। যদি সভ্যতাই নারীদের সম্মাণ ও মর্যাদা রক্ষায় যথেষ্ট হতো, তাহলে কেনো উত্তর আমেরিকায় নারীরা একাকী রাস্তায় বা নির্জন এলাকায় চলতে পারে না? আর যদি কেবল শিক্ষাই তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারে তাহলে, কুইন ইউনিভার্সিটির মতো প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেনো নারীদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়? কেবল শিষ্টাচারই যদি তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারত, তাহলে আমরা প্রতিনিয়ত নারীদের ধর্ষণ ও উত্যক্ত করার মত যে সমস্ত ঘটনার সংবাদ পাচ্ছি তার অধিকাংশই কর্মস্থলে কেনো ঘটে চলেছে?
আরো পড়ুনঃ
যেসব দোয়ায় জান্নাত পাওয়া যায়/সকাল-সন্ধ্যা জিকির
বিগত কয়েক বছরের ধর্ষণ ও নারীদের সম্মানহানির যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে জড়িতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ হচ্ছে: নৌবাহিনী, অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনেট সদস্য, উচ্চ আদালতের বিচারক, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রভৃতি।
কুইন ইউনিভার্সিটির মহিলা বিভাগের ডীন কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট নিম্নরূপ- প্রত্যেক ৬ মিনিটে কানাডায় একজন মহিলার ওপর আক্রমণ হয়। কানাডার প্রত্যেক ৩ জন মহিলার মধ্যকার ১ জন এ আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রত্যেক ১-৮ জন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণের শিকার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলের ৬০% ছাত্র অচিরেই এ ধরণের কাজ করবে। যদি নিশ্চিত থাকে যে, তাকে এ কাজের জন্য অচিরেই কোনো শাস্তির সন্মুখীন হতে হবে না। আমাদের সমাজে ভুলপ্রথা আজ মহামারীর আকার ধারন করেছে। যার শিকড়সহ সংস্কার প্রয়োজন। পুরুষ ও নারী উভয়ের মান-সম্মান ও চরিত্রের নিষ্কলুষতার দাবী পোশাক, কথাবার্তা ও আচার-আচরণ প্রভৃতি সবকিছুতেই। অন্যথায় অবস্থা আরও বেগতিক হবে এবং মহিলাদেরকে আরও বেশি খেসারত দিতে হবে এবং আমাদেরকে আরো বেশি দুঃখ পেতে হবে। খলীল জিবরানের একটা বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন- “যে কোনো প্রকার সমস্যায় পতিত হয়েছে সে আর যে সমস্যার জরীপ করেছে তারা উভয়ে সমান নয়।” [Khalil Gibran, Thoughts and Medita tions (New York: Bantam Books, 1960) p. 287]
ফ্রান্স আজ যেভাবে পর্দা করা নারীদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়ন করছে তা তাদের নিজেদের দেশের জন্যেই বিপদ ডেকে আনবে। বর্তমান যুগে যখন কোনো ক্যাথলিক খৃষ্টান মহিলা হিজাব পরে তখন তা সে স্বামীর সম্মানের জন্য পরিধান করেছে বলে পবিত্র গণ্য হয়; অপরদিকে একই হিজাব যখন কোনো মুসলিম মহিলা তার নিজের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পরে থাকে, তখন তা নারীর ওপর অত্যাচার বলে চাউর করা হয়। এ কেমন অদ্ভুত দ্বৈতনীতি!
আরো পড়তে পারেনঃ
৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার পর্ব ১
ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব ও বিধান
ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
যৌবনকাল ইসলামে ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়
চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত #তাকবীরউলা
হস্তমৈথুন এবং এটা থেকে বাঁচার উপায়
দামি আতর কেনা কি অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে?
দুই মসজিদ কাছাকাছি, কোন মসজিদে নামাজ পড়বেন?