পশ্চিমাবিশ্ব নারীদের ওপর কঠোরতার প্রমাণ হিসেবে পর্দার বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে থাকে। আমাদের প্রশ্ন খৃষ্টান বা ইহুদি ধর্মে কি পর্দার কোনো বিধান নেই?
ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইবেল শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ড. মিনামি এম. ব্রায়ার তার গ্রন্থ The Jewish woman in Rabbinic literature (ইহুদিদের আইনে ইহুদি মহিলা)-তে লিখেছেন-
“ইহুদি মহিলারা মাথা ঢেকে বাইরে বেরোতেন। কখনো কখনো তারা একটি চোখ ছাড়া তাদের গোটা চেহারা ঢেকে রাখতো।”
তিনি তার কথার প্রমাণ দিতে গিয়ে পূর্ববর্তী বিখ্যাত ইহুদি পণ্ডিতদের কথা নিয়ে এসেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে- হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর কন্যাগণ মাথা খোলা রেখে রাস্তায় বের হতেন না। ওই পুরুষের ওপর অভিশাপ যে তার স্ত্রীকে খোলা মাথায় রাস্তায় ছেড়ে দেয়। কোনো মহিলা সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্যে মাথার চুল ছেড়ে দিলে তা দারিদ্রতার কারণ হয়। ইহুদি পণ্ডিতদের আইন অনুযায়ী যে বিবাহিত মহিলা তার চুল অনাবৃত রেখে দিয়েছে, তার উপস্থিতিতে উপাসনার ভেতরে বা বাইরে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা নিষিদ্ধ। মাথা অনাবৃত রাখাকে উলঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সম্পর্কিত পোষ্ট
নারীদের গোপন মাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ১
ইসলামে নারীর পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মহিলাদের যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েয
বিভিন্ন ধর্মে পর্দারবিদান পর্ব ২
ড. ব্রায়ার আরও বলেন- “টেনেইটিক যুগে যে সব ইহুদি মহিলা মাথা অনাবৃত রাখতো তাদেরকে বেহায়া হিসেবে গণ্য করে চারশো মুদ্রা করে জরিমানা করা হতো।”
পর্দা নারীর সামাজিক মর্যাদারই পরিচয় বহন করে এবং তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। হিজাব ভদ্রতার পরিচায়ক হওয়ার কারণে পুরাতন ইহুদি সমাজে ব্যাভিচারী মহিলাদের হিজাব পরিধানের অনুমতি ছিল না। ইউরোপের ইহুদি মেয়েরা ঊনবিংশ শতাব্দীতে পর্দা মেনে চলতো। তাদের জীবন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথে মিশে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত । ইউরোপের সমাজব্যবস্থা অনেককে পর্দা খুলতে বাধ্য করেছে। অনেক ইহুদি নারী তাদের মাথায় পরচুলা লাগিয়ে মাথাকে সুন্দরভাবে প্রদর্শন করার চেয়ে পর্দা বিধান পালন করাকে উত্তম মনে করেন। কিন্তু এখন অধিক ধার্মিকা ইহুদি নারীরা তাদের উপাসনালয় ছাড়া অন্য কোথাও চুল ঢেকে রাখেন না। তাদের কেউ কেউ এখনও পরচুলা ব্যবহার করে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ
নামাজ অবস্থায় অযূ ভঙ্গ হলে করণীয়
মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণ কেমন হবে
এবার আমরা এ বিষয়ে খৃষ্টানদের ধর্ম বিশ্বাস কী বলে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে পারি। একথা প্রমাণসিদ্ধ যে, ক্যাথলিক খৃষ্টানযাজক নারীরা শত শত বছর ধরে পর্দা বিধান মেনে চলছেন। পর্দা সম্বন্ধে নতুন নিয়মে (new testament) পোলের ভাষ্য এমন-
“কোনো মহিলা খালি মাথায় উপাসনা করলে তার মাথাকে অপদস্থ করা হবে। মাথাকে অপদস্থ করা মানে মাথার চুল কামিয়ে দেওয়া। অতএব, কোনো মহিলা মাথা ঢেকে না রাখলে তার মাথার চুল কামিয়ে দিতে হবে। যদি কোনো মহিলার জন্য তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলা অপমানজনক মনে হয়, তাহলে সে যেন তার মাথা ঢেকে রাখে।” [I Corinthians 11:3-10]
বিশিষ্ট ধর্মযাজক টারটোলিয়ান তার বিখ্যাত গ্রন্থ On the Veiling of Virgins -তে লিখেছেন-
“রাস্তাঘাট, গীর্জা, নিজ ভাতৃবর্গ ও বেগানা পুরুষদের সামনে পর্দা করা জরুরি।”
আরো পড়ুনঃ
বর্তমানেও ক্যাথলিক খৃষ্টানদের নিয়ম হচ্ছে- নারীরা গীর্জার ভেতরে অবশ্যই তাদের মাথা ঢেকে রাখবে। আমিশ, মিনোনাইট প্রমুখ খৃষ্টানগণ আজও হিজাব পরিধান করে থাকেন। পর্দা সম্বন্ধে গীর্জার পাদ্রীরা বলে থাকেন যে, পর্দা হলো নারীর স্বামীর প্রতি আনুগত্য ও স্রষ্টার আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। এ কথাটি new testament -এ পোল নিজেই বলে গেছেন। উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, পর্দা ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত নতুন কোনো বিধান নয়, বরং ইসলাম কেবল পর্দার বিধান পালনের জন্যে তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কুরআন মুমিন নারী ও পুরুষদেরকে দৃষ্টি অবনত রাখা ও চরিত্রকে নিষ্কলুষ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। মহিলাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের বক্ষদেশের উপরে আবরণ ছেড়ে দিতে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغْضُوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ * وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ –
“মুমিন পুরুষদেরকে বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলো- যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।” [সূরা নূর, আয়াত : ৩০-৩১]
৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার পর্ব ১
ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব ও বিধান
ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
যৌবনকাল ইসলামে ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়
চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত #তাকবীরউলা
হস্তমৈথুন এবং এটা থেকে বাঁচার উপায়
দামি আতর কেনা কি অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে?
দুই মসজিদ কাছাকাছি, কোন মসজিদে নামাজ পড়বেন?