হায়েয বা মাসিক প্রতিটা মহিলার একটা স্বাভাবিক ঘটনা। মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা হয়ে থাকে। যা হযরত হাওয়া (আ.) থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
কিন্তু এই হায়েয বা মাসিক নিয়ে প্রায় সব মহিলার মনেই কিছু না কিছু প্রশ্ন আছেই। লজ্জার বিষয় তাই হয়তো অনেক মহিলাই মাসিক নিয়ে কারো সাথে খুলা-মেলা (মাসলা-মাসায়েল) আলোচনা করতে পারেন না।তাই আমরা কোরআনের আলো
ব্লগের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এখন থেকে প্রতি মঙ্গলবার মহিলাদের
দৈনন্দিন জীবনে জরুরি মাসায়েল সম্পর্কিত পোষ্ট করা হবে ইন-শা-আল্লাহ,
আল্লাহু-তায়ালা। এইসব পোষ্টের মাধ্যমে বালিকা থেকে মহিলা প্রায় সবার মাসায়েল বা
সমস্যা গুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। এই পোষ্ট গুলো “মহিলাদের জরুরি মাসায়েল” নামে ব্লগের ম্যানুবারে পেয়ে
যাবেন।
হায়েযের সময়সীমা
হায়েযের সর্বনিম্ন মেয়াদ
তিনদিন তিনরাত, আর সর্বোচ্চ মেয়াদ দশদিন দশরাত। উল্লেখ্য, হায়েযের সর্বনিম্ন মেয়াদের
ক্ষেত্রে তিনদিন তিনরাত দ্বারা পৃথক পৃথক পূর্ণ তিনদিন তিনরাত উদ্দেশ্য নয়, বরং তিনদিন
তিনরাত পরিমাণ সময় অর্থাৎ, ৭২ ঘণ্টা উদ্দেশ্য। একইভাবে হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদও
পরিপূর্ণ দশদিন দশরাত ।
নারীদের গোপনমাসায়েল ও আলোচনা পর্ব ১
ইসলামে নারীর
পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মহিলাদের যাদের সাথে দেখা দেয়া
জায়েয
দুই হায়েযের
মধ্যবর্তী সময়
প্রশ্নঃ দুই হায়েযের
মধ্যবর্তী সময় কমপক্ষে কতদিন?
উত্তরঃ দুই হায়েযের মধ্যবর্তী সময়
কমপক্ষে পনের দিন।
তিন দিনের কম হায়েয হওয়া
প্রশ্নঃ যদি কোনো মহিলার মাসে কেবল দুই দিন স্রাব হয়, তাহলে তার হুকুম কী? তখন উক্ত রক্ত হায়েয বলে গণ্য হবে, না ইস্তেহাযা?
উত্তরঃ কোনো মহিলার মাসে কেবল দুই দিন স্রাব হলে, উক্ত রক্ত ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। কারণ, হায়েযের সর্বনিম্ন মেয়াদ হলো তিনদিন তিনরাত, আর এর চেয়ে কম সময় হলে হায়েয হয় না, ইস্তেহাযা হয়।
অনুর্ধ্ব নয় বছর বয়সী
মেয়ের হায়েয হওয়া
প্রশ্নঃ কোন নয় বছরের মেয়ের যদি নিয়মিত স্রাব শুরু হয় তার এই স্রাবের দিন গুলোকে কি হায়েজ হিসেবে গণ্য হবে?
আরো পড়ুনঃ
নামাজ অবস্থায় অযূ ভঙ্গ হলে করণীয়
অনিয়মিত সময় হায়েয
হওয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলা ৫ দিনের হায়েযে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবত কখনো তার ১০ দিন, আবার কখনো ১১ দিন রক্ত আসছে। ৫ দিন পরের রক্ত হায়েয বলে গণ্য হবে, না ইস্তেহাযা?
উত্তরঃ যদি স্রাব ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ১০ দিনই হায়েয বলে গণ্য হবে। আর স্রাব যদি ১০ দিন অতিক্রম করে, তাহলে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী ৫ দিনকে হায়েয ধরবে আর বাকী দিনসমূহকে ইস্তেহাযা হিসেবে ধরে নিবে।
অনির্দিষ্ট সময়সীমায় অভ্যস্ত কোনো মহিলার ১০ দিনের অধিক ঋতুস্রাব হওয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলার হায়েযের সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। অর্থাৎ কখনো ৭ দিন, কখনো ৮ দিন হায়েয আসে। আর এভাবেই পরিবর্তন হতে থাকে। তার যদি কখনো ১০ দিনের অধিক রক্ত আসে, তাহলে তার হায়েযের দিনগুলোকে কীভাবে গণনা করা হবে?
উত্তরঃ ১০ দিনের চেয়ে কম যে রক্ত আসবে, তা হায়েযের মধ্যে গণ্য হবে। আর যদি ১০ দিনের বেশি রক্ত আসে, তাহলে পূর্ববর্তী মাসে ৭/৮ দিন যে ক'দিন এসেছিলো তাকে হায়েয ধরে বাকী দিনসমূহকে ইস্তেহাযা ধরে নিবে।
৪-৫ দিনে অভ্যস্ত মহিলার পরবর্তী কোনো মাসে ১৫ দিন হায়েয হওয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলার অভ্যাস প্রতি মাসে ৪ দিন হায়েয হওয়া। কিন্তু কোনে মাসে তার ৫ দিন হায়েয হলো। তারপরের মাসে হঠাৎ হায়েয এলো ১৫ দিন। এতাবস্থায় উক্ত মহিলা হায়েয এবং ইস্তেহাযা কীভাবে পার্থক্য নির্ধারণ করবে?
উত্তরঃ এতাবস্থায় তার পূর্ব অভ্যাস ৪ দিন হিসেবে ধর্তব্য না হয়ে ৫ দিনের হায়েযে অভ্যস্ত বলে ধর্তব্য হবে। অতএব, ১৫ দিনের যে মাসটি তাতে আগের মাসের হিসেব হায়েয হিসেবে গণ্য হবে হতে পারে তা ৫ দিন, বা কমবেশ আর অবশিষ্ট দিনসমূহ ইস্তেহাযা বলে ধর্তব্য হবে।
সম্পর্কিত পোষ্ট
নিয়মিত অভ্যাসের
পূর্বে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
প্রশ্নঃ কোন মহিলার নিয়মিত ৭ দিন স্রাব হবার অভ্যাস ছিল। হঠাৎ এক মাসে ৫ম দিনে
তার স্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এখন তার করণীয় কী?
উত্তরঃ এমন অবস্থায় তার করণীয় হচ্ছে, সতর্কতামূলক গোসল করে নামায পড়তে থাকা ও রমযান মাস হলে রোযা রাখতে থাকা। এক্ষেত্রে মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত গোসল বিলম্ব করে নামায আদায় করা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, যেহেতু পুনরায় হায়েয আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সাতদিন পূর্ণ হওয়ার আগ পযর্ন্ত সহবাস করা জায়েয হবে না।
নিয়মিত অভ্যাসের পর
স্রাব হওয়া
প্রশ্নঃ কারো হায়েয আসার অভ্যাস ৩ দিন। কিন্তু কোন মাসে ৩ দিনের পরও ঋতুস্রাব
অব্যাহত ছিল। এখন তার করণীয় কী?
উত্তরঃ এমন অবস্থায় ৩ দিনের পরেও তার জন্য নামায, রোয়া আর সহবাস ইত্যাদি নিষেধ। কারণ এখনও পূর্বের অভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যদি চলমান এ প্রবাহ ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং এ দিনগুলো হায়েয বলে গণ্য হবে। আর যদি তার চলমান এ স্রাব ১০ দিন অতিক্রম করে, তাহলে পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী ৩ দিনকে হায়েয ধরে বাকী দিনগুলোকে ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে। ফলে বাকী দিনগুলোর নামায ও রোযা তাকে কাযা করতে হবে।
হায়েয অবস্থায় গোসল
করা
প্রশ্নঃ কোনো কোনো অঞ্চলে এ কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, হায়েয অবস্থায় গোসল করা উচিত নয়। কেননা, হায়েয অবস্থায় গোসল করলে শরীর জান্নাতে প্রবেশ করে না। প্রসিদ্ধ এ কথাটি কতটুকু সঠিক?
উত্তরঃ এটি প্রচলিত ভুলের অর্ন্তভুক্ত এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। হায়েযা মহিলা শারীরিক শান্তি লাভের জন্য গোসল করতে কোনো সমস্যা নেই। ইসলামী শরিয়তে তার অনুমতি আছে।
আরো পড়তে পারেনঃ
৫ টি কথায় সকল চাওয়া/ যেসব আমলে দ্রুত দোয়া
কবুল হয়
ইসলামে প্রতিবেশীর
অধিকার পর্ব ১
ইসলামে মেহমানদারির
গুরুত্ব ও বিধান
ইবাদত কবূল হওয়ার শর্তাবলী ১ম পর্ব
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
যৌবনকাল ইসলামে ইবাদতের
শ্রেষ্ঠ সময়
চল্লিশ দিন জামাতে
নামাজ পড়ার ফজিলত #তাকবীরউলা
হস্তমৈথুন এবং এটা থেকে বাঁচার উপায়
দামি আতর কেনা কি
অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে?
দুই মসজিদ কাছাকাছি, কোন মসজিদে নামাজ পড়বেন?